মুর্শিদাবাদ

অবশেষে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় ৯ বছর পর পায়ে হাটা শুরু পক্ষাঘাতে আক্রান্ত আজমিরার

রাজ‍্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটোছুটি করেও মেলেনি ফল। স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে লাইনে দাঁড়িয়ে দুটাকার টিকিট কেটে পরিবারের মুখে ফুটলো অনাবিল হাসি। নবছর পর পায়ে হাটতে চলা শুরু করল দিনমজুর পরিবারের কিশোরি আজমিরা পারভিন।

সরকারি চিকিৎসদের এমন অভিনব প্রচেষ্টায় নজর কাড়লো মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। নবছর পর মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে পায়ে হাটতে দেখে আনন্দ কেঁদে উঠলেন মা রুনা পারভিন।

উল্লেখ্য, মালদহের চাঁচল-১ নং ব্লকের মকদমপুর পঞ্চায়েত এলাকার ইসমাইলপুর গ্রামে পেশায় রাজমিস্ত্রি আসাদ আলি।তার পরিবারে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছোটো মেয়ে আজমিরা জন্মের পর থেকেই পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। দীর্ঘ নবছর বাবা মায়ের কোলেই বড় হয়েছে আজমিরা। কখনও বিছানায় কখনও বা মায়ের কোলেই আশ্রয়স্থল। হেটে চলার ক্ষমতা তার মধ‍্যে ছিলনা। যত দিন যাচ্ছিলো, ততই জটিল হচ্ছিল রোগের পরিধি। রাতের ঘুম উড়ছিলে পরিবারের। নুন আনতে পান্তে ফুরোনোর সংসারে কিভাবে এই জটিল রোগের চিকিৎসা করাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন দিনমজুর পরিবার। সংসারের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে রাজ‍্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েও ফলপ্রসূ চিকিৎসা মেলেনি।
নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় গ্রামে।
তাদের সন্তান কোনদিনও আর নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে না।এইভাবেই নিরাশ হয়ে মেয়েকে বাড়িতেই শয‍্যাসায়ী রেখেছিল।

শেষমেষ, প্রতিবেশীদের পরামর্শে স্থানীয় চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ছুটে গেলেন পক্ষাঘাতে আক্রান্তের পরিবার।সেখানে বহির্বিভাগে দু টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ফিজিওথেরাপি বিভাগে শুরু হয় তার চিকিৎসা।টানা একবছর চিকিৎসা চলার পর উঠে দাঁড়াল আজমিরা।চিকিৎসকদের পরামর্শে 'ক‍্যালিপার সু' পড়িয়ে  তাকে হাটানো হল। উদ‍্যম জেদ ও ইচ্ছেশক্তির জেরে গুটি গুটি পায়ে হাটতে শিখলো নবছরের বিকালঙ্গ জীবনে বন্দি থাকা আজমিরা। এই দৃশ‍্য দেখে আনন্দে আত্মহারা পরিবার থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ওই কিশোরীর মা রুনা পারভিন বলেন, মেয়ে হাঁটতে পারবে এই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিভিন্ন প্রান্তে দোড়ঝাপ করেও মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারিনি।কিন্ত বাড়ির পাশে সরকারি চাঁচল হাসপাতালেই যে মিলবে রোগ নির্ণয়ের বিকল্প সুরাহতাও আবার নিখরচায়, ভাবতেই অবাক লাগছে।

হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিষ্ট সুনির্মল ঘোষ আনন্দিত হয়ে বলেন, আমরাও উচ্ছসিত যে দিনমজুরের পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে পারলাম। বছর খানেক আগে সংকল্প নিয়েছিলাম ছোট্ট আজমিরাকে পায়ে হাটাব। স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ব‍্যয়বহুল  বিশেষ সু দেওয়া হয়েছে।ষতা পরেই হাটছে আজমিরা। শুধু  আজমিরা নয়, এইভাবে চলতিবছরে প্রায় দশজন শিশুকে আমরা হাটার পথ খুঁজে দিয়েছি।

চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারি সুপার শান্তনু কর্মকার জানান, তিনবছর আগে হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু করা হয়। এখানে মহকুমার শতাধিক বিকালাঙ্গ শিশু চিকিৎসা করিয়েছেন। সিংহভাগই শিশুই সু -চিকিৎসা পেয়েছেন।